ভেজালপণ্য কি? ইহা কত প্রকার? সিরিজ: ০৩ (ফসলের খাদ্য - রাসায়নিক সার, এবং ঔষধ - কীটনাশক)

সুজলা সুফলা আমাদের দেশের মাটিতে হইলো টা কি? সময়ের পরিক্রমাতে আমাদের মাটি কি অজলা অফলা তে পরিণত হওয়ার কারণে অত্যধিক কিংবা অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ভেষজনাশক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে পড়লো? তাতে আমাদের সুবিধাই কি হলো? সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী কি কি অসুবিধা আমাদের হচ্ছে, তা নিয়ে আজকে কিছু আলোচনা করে দেখি ...

প্রথমত, ১৯৮০-এর দশকে সবুজ বিপ্লবের সময় সারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৯৫ সালে সরকারি কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি সহ বিনামূল্যে সার সরবরাহ শুরু করে। সময়ের পরিক্রমায় সার শিল্পের বিস্তার এবং খুচরা বিক্রেতা নেটওয়ার্ক বড় হয়ে যাওয়ার কারণে সারের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৮০-৮১ এবং ২০২২-২৩ (ফেব্রুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত) মধ্যে গড়পড়তা সারের চাহিদা ৮৭৫.১৭৯ থেকে বেড়ে ৬৮২৫.৫৫ মেট্রিক টন হয়ে যায়। উক্ত সময়ের মধ্যে ইউরিয়া (৫৫৯.৭৭৬ থেকে ২২৮৬.০০ মেট্রিক টন), ট্রিপল সুপার ফসফেট (২১৫.০৬১ থেকে ৬৭৪.০০ মেট্রিক টন) , মিউরিয়েট অফ পটাশ (৪৫২.০৪ থেকে ৮২৬.০০ মেট্রিক টন) এবং ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (৪১৭.৩৬ থেকে ১৪২৭ মেট্রিক টন) এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি পায়। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলন ২০১৮ এবং ২০২৪). 

এদেশের কৃষকরা বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করেন। বহুল ব্যবহৃত কীটনাশকগুলির মধ্যে ছিল (১) অর্গানোফসফরাস (কীটপতঙ্গের পেশী ও শ্বাসযন্ত্রকে দুর্বল করে এবং পক্ষাঘাত এর মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে), (২) পাইরেথ্রয়েড (কীটপতঙ্গের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কিছু পাইরেথ্রয়েড যেমন - ডিডিটি, ক্লোরডেন, টক্সাফিন এখন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ), (৩) কার্বামেট (কীটপতঙ্গকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে), (৪) অর্গানোক্লোরিন (কীটপতঙ্গের স্নায়ুতন্ত্রকে ব্যাহত করে, যার ফলে কীটপতঙ্গের খিঁচুনি, পক্ষাঘাত এবং মৃত্যু হয়), (৫) নেরিস্টক্সিন অ্যানালগ গ্রুপ (স্নায়ু সংকেতের চলাচলে হস্তক্ষেপ করে, যার ফলে পক্ষাঘাত হয় এবং শেষ পর্যন্ত পোকামাকড়ের মৃত্যু হয়), এবং (৬) নিওনিকোটিনয়েড (কীটপতঙ্গের একটি নির্দিষ্ট স্নায়বিক পথ ব্যাহত করার মাধ্যমে মৃত্যু নিশ্চিত করে) ইত্যাদি। Ref: M.S. Ahmed, A. Begum, M.A. Rahman, M.W. Akon, M.A.Z. Chowdhury. Extent of insecticide residue load in vegetables grown under conventional farming in Bangladesh. Agriculturists, 14 (2) (2016). 

কীটনাশক, ভেষজনাশক এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত কৃত্রিম সার মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার, স্নায়বিক ব্যাধি এবং প্রজনন সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘমেয়াদী অতিরিক্ত নাইট্রেট গ্রহণ করার সাথে ক্যান্সার সহ বেশ কয়েকটি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্যাধির সংযোগ রয়েছে।  অতিরিক্ত নাইট্রেট ধারণকারী জল খাওয়ার কারণে ছোট বাচ্চারা মূলত মেথেমোগ্লোবিনেমিয়ায় (রক্তের হেমোগ্লোবিন সংক্রান্ত একটি রোগ) আক্রান্ত হয় এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্মগত অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। কীটনাশকের বিষক্রিয়ার ফলে মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, খিঁচুনি, এবং বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন দুর্বল মনোযোগ ও প্যানিক এটাক হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে কোমা এবং মৃত্যু হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। Ref: M.S. Ahmed, A. Begum, M.D.H. Prodhan, D. Sarker. Analysis of pesticide residue in vegetables collected from nine different regions of Bangladesh using Gas Chromatography. Asian-Australas. J. Food Saf. Secur., 3 (1) (2019), pp. 23-26, 10.3329/aajfss.v3i1.55923. 

সবচাইতে interesting একটা বিষয়: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণার জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩২টি কীটনাশকের নমুনা সংগ্রহ করে আলামত পায় যে ৩০ শতাংশ কীটনাশকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক সক্রিয় বা মূল উপাদান ছিল। ফলশ্রুতিতে কীটনাশকের প্রভাব কমে যাওয়ার কারণে, কৃষকদের এখন ফল উৎপাদনের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের ১০-১৫ গুণ এবং শাকসবজি চাষের জন্য ৮-১০ গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে। (https://www.thedailystar.net/pesticides-used-15-times-the-limit-41205) Fri Sep 19, 2014 

তাহলে সমাধান কি? আপনারা কিছু বলেন  ...