ভেজালপণ্য কি? ইহা কত প্রকার? সিরিজ: ০২ (পশুখাদ্য)

অতিলোভী এক খামারি কোরবানি উপলক্ষে, উচ্চবংশীয় একটা ছাগল মাত্রাতিরিক্ত দামে বিক্রি করলো, নিম্নবংশীয় (কু)প্রভাবশালী পিতা কর্তৃক অস্বীকৃত পুত্র এক মাকাল ফলের কাছে। আল্লাহ'র কি অসাধারণ লীলা। উচ্চবংশীয় ছাগল বেঁচে রইলো কিন্তু অতিলোভী খামারি এবং নিম্নবংশীয় মাকাল ফল - দুইজনই সামাজিকভাবে কোরবানি হয়ে গেলো।

ছোটবেলাতে দেখতাম - লোকাল বাসে লেখা "ব্যবহারে বংশের পরিচয়"। কবি আব্দাল হোসেন কাজী বলেছেন সেই কবেই বলেছেন - জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। আমরাও বিশ্বাস করি - বংশ পরিচয় আসলে ব্যবহারে এবং কর্মেই প্রকাশিত। মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত কিছু অতিলোভী এবং নিম্নবংশীয়রা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য সমাজে বিভিন্ন ধরণের অসংগতি, ভেজাল ও কৃত্তিম সংকট তৈরী করে। সমাজের  সব ধরণের অসংগতি, ভেজাল ও কৃত্তিম সংকট নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব না। আজকে আমরা গবাদি পশুর, বিশেষ করে "উচ্চবংশীয় পশুর" খাদ্যে ভেজাল নিয়েই আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি।

মূলতঃ খামারীরাই যে পশুখাদ্য নিয়ে সব সংকট তৈরী করে, ব্যাপারটা তা না। যেমন - নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাট বাজারে ভেজাল (চালের পচা ব্রান এর সাথে ধানের কুঁড়া ও মেয়াদ উত্তীর্ণ আটা মেশানো) গো-খাদ্য বিক্রি হয়। এতে উপজেলার কয়েক শত খামারি প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। খামারিরা বলছেন, ভেজাল পশুখাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর, বিক্রি বন্ধ করা না গেলে তারা হুমকির মুখে পড়বে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই। (https://www.jaijaidinbd.com/wholecountry/200044/মহাদেবপুরে-ভেজাল-গো-খাদ্যে-বাজার-সয়লাব)২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১। 

বগুড়ার শেরপুরের খামারি জনাব আতাউর রহমান ও জনাব আবদুল মান্নান বলেন, পশুখাদ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ আটা, বালু ও সিরামিকসের ধুলা। পরে নামিদামি কোম্পানির সিল দেওয়া বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের খামারি আবদুর রব বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার প্রাণিজ খাবারের খুচরা দোকান আছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে পাইকার দোকানির যোগাযোগ। পাইকারের সঙ্গে আবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত। তিন চক্রের যোগসাজশে মূলত গোখাদ্যের দাম বাড়ে। চাহিদা বাড়লে মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কমে না।(https://samakal.com/bangladesh/article/236733/প্রাণিখাদ্যের-বাজার-সিন্ডিকেটের-চক্করে)১২ মে ২০২৪। 

Food and Agriculture Organization of the United Nations (FAO) এর মতে - পশুখাদ্যের সাথে সম্পর্কিত খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি জৈবিক, রাসায়নিক বা ভৌত হতে পারে এবং এই ঝুঁকি নির্বাচন করতে নিম্নলিখিত মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে (১) জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার প্রাসঙ্গিকতা (২) বিপদ সংঘটনের সম্ভাবনার পরিমাণ এবং (৩) খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্যের উপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ঝুঁকির প্রভাব। পশুখাদ্যে স্বাস্থঝুঁকি যে কেবল ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে হয় তা না এবং অনেকসময় অজ্ঞানবশতঃ কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণেও হয়ে থাকে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আসলে সম্ভাব্য ঝুঁকির জন্য পূর্বপ্রস্তুতি এবং প্রতিরোধের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত এবং সমস্যা হওয়ার পর প্রতিকারের চেষ্টার পরিবর্তে। (https://www.fao.org/4/i1379e/i1379e01.pdf)(Health hazards associated with animal feed) 

আমাদের দেশের অনেকগুলো বিভিন্ন ধরণের ঘটনার মধ্যে একটি  - খামারীর অজ্ঞতা এবং ভুল খাদ্য খাওয়ানোর কারণে একটি পশুর দুঃখজনক মৃত্যু ঘটে। গরুটির পোস্টমর্টেম করা হলে দেখা যায়, তার কিডনি, লিভার এবং ফুসফুসে পানি জমে গিয়েছে, যা ছবিতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান (আপনারা চাইলে লিংক এ গিয়ে ছবি দেখতে পারেন)। গরুটিকে ব্রয়লার ফিড বা মুরগির ফিড খাওয়ানো হয়েছিল। অনেক খামারী মনে করেন মুরগির ফিড খাওয়ালে গরু মোটা হয়। (https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=703657161999567&id=100070658671457&rdid=worqWrDkkrhFDgWr#

সমাধানের কথা যে কিছু লিখবো, কি লিখবো, তা চিন্তা করতে গিয়ে আমাদের মাথা খারাপ হওয়ার দশা। আপনারা যদি একটু সাহায্য করেন, আন্তরিকভাবেই বাধিত হবো। ধন্যবাদ।