কলকাতায় এক কেজি গরুর মাংসের দাম ১৭৫ রুপি (বাংলাদেশী ২২৪ টাকা)। পাকিস্তানে গরুর মাংস পাওয়া যায় ৬০০ রুপিতে (বাংলাদেশী ২৩০ টাকা)। নেপালে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ০.৭৬ ইউএস ডলার (বাংলাদেশী ৮০ টাকা), ভুটানে ১৬০ নুল (বাংলাদেশী ২০৭ টাকা)মিয়ানমারে ৫.৬৬ ইউএস ডলার (বাংলাদেশী ৫৬৭ টাকা)।দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে খাবারযোগ্য মাংশের চাহিদা ৭৬ লাখ টন, উৎপাদন ৯২ লাখ টন, উদ্বৃত্ত ১৬ লাখ টন (উৎপাদনের ১৮% ), রপ্তানী প্রায় শুন্য। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত ১৬ লক্ষ টন অপ্রয়োজনীয় ভোগ, বিনামূল্যে ব্যবহার অথবা পচে নষ্ট হয়। এখানেই খরচ বাড়ে ১৮%। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত ১৬ লক্ষ টন রপ্তানী কিংবা বিক্রয় হলে, কেজি প্রতি মাংসের দাম হত ৬৪০ টাকা।
আমদানি করে মাংস বিক্রি করলে বাংলাদেশে ভোক্তা পাবে ৫০০ টাকা / কেজির চেয়ে কমে। আবার, আমদানি করলে স্থানীয় খামারিরা (আনুমানিক ২৫ লাখ) আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অধিকন্তু স্থানীয় পশু খাদ্যের ব্যাবসায়ী (আনুমানিক ৫০০০) আন্তর্জাতিক অপ্রতিযোগীতামূলক বাজারে (বাংলাদেশ) পশু খাদ্যের দাম বেশিই রাখে।
এখন, প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা হিসেবে ৭৬ লক্ষ টন অর্থাৎ ২২৮,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের ভোক্তাকে যা সরাসরি স্থানীয় ২৫ লক্ষ খামারি আর স্থানীয় ৫০০০ পশু খাদ্যের ব্যাবসায়ী লাভবান করছে।
এখন কথা হচ্ছে বাংলাদেশের ভোক্তারা অতিরিক্ত দামে মাংস কিনার পরে ও কি মানসম্পন্ন এবং স্বাস্থসম্মত পণ্য কিনতে পারছে কিনা? খামারীর অজ্ঞতা, পশু খাদ্যের উচ্চ বাজারমূল্য, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে, গবাদিপশুকে এমনসব পশুখাদ্য খাওয়ানো হয় যে পশুর চামড়ার নিচে পানি জমে, পশুকে স্বাস্থবান দেখায়। কিন্তু জবাই করার পর দেখা যায় মাংস হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো চুপসে যায় এবং ওজনও কম হয়। এছাড়া, ব্রয়লার ফিড বা মুরগির ফিড ও খাওয়ানো হয় পশুকে যাতে পশুর আকৃতি দ্রুত বড় হয়ে উঠে। ব্রয়লার মুরগির ফিডে থাকা স্টার্চ এবং হাড়ের গুঁড়ো গরুর পক্ষে হজম করা সম্ভব হয় না, যার কারণে পশুর মধ্যে পেটেরপীড়া সহ নানারকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। পশুর কিডনি, লিভার এবং ফুসফুসে পানি জমে। পশুমৃত্যুর হার ও বেড়ে যাই। বর্তমান সময়ে গবাদিপশুর বাজার মূল্য এতটাই উচ্চ যে একটি গরুর মৃত্যু ছোট ছোট খামারীর জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়।
এখন সমাধান কোথায়? সরকার পর্যায়ে এমনভাবে নীতিনির্ধারণ করতে হবে যাতে স্থানীয় খামারি, স্থানীয় পশু খাদ্যের ব্যাবসায়ী ও ভোক্তা - সবার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা হয়। কিন্তু সবকিছু সরকারি পর্যায়েই করতে হবে, এই মানসিকতা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যবসা মানেই শুধু যেকোনোভাবেই মুনাফা অর্জন - এটা ব্যবসার কোনো সংজ্ঞাতেই পরে না। আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রেতাসাধারণকে জিম্মি করে শুধু মুনাফা অর্জন - এটাও অসৎ চরিত্রের ধান্দাবাজির সংজ্ঞাতে পড়তে পারে। জনসাধারণ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে বাধ্য হলে। জনসাধারণ বাধ্য হওয়ার আগেই যে যার যার মতো করে শুদ্ধ পথে ফিরে আসুক, এটাই কাম্য।
(সংকলিত)(সংগ্রহীত - Health বার্তা ফেইসবুক পেজ)